সাবিত্রী-সত্যবান এবং সনাতন

 

সাবিত্রী ও সত্যবান: একটি ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ

সাবিত্রী ও সত্যবানের কাহিনী সনাতন ধর্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এক নারী-আদর্শ ও পতিব্রতা স্ত্রীর প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। এই কাহিনী মূলত “মহাভারত”-এর অন্তর্গত “বনপর্ব”-এ বর্ণিত হয়েছে। এটি শুধুমাত্র একটি পৌরাণিক প্রেমগাঁথা নয়, বরং ধর্ম, নৈতিকতা, সতীত্ব ও স্ত্রীর কর্তব্যবোধের মহিমা প্রতিপাদনের এক অনন্য দৃষ্টান্ত।


মূল উৎস: মহাভারত, বনপর্ব (Vana Parva), অধ্যায় ২৯৩-২৯৯

📜 কাহিনীর সারাংশ:

রাজা অশ্বপতির কন্যা সাবিত্রী ছিলেন এক অতি সুন্দরী ও বুদ্ধিমতী রাজকন্যা। তিনি নিজেই তাঁর জন্য স্বামী খুঁজতে বের হন এবং বনে বাসকারী সত্যবানকে ভালোবেসে তাঁকে বিয়ে করতে চান। কিন্তু নারদ মুনি সাবিত্রীকে সতর্ক করে বলেন যে সত্যবান মাত্র এক বছরের আয়ু অবশিষ্ট আছে।

সাবিত্রী তা জেনেও সত্যবানকেই বিয়ে করেন এবং তার সঙ্গে বনবাসে যান। এক বছর পরে, ঠিক সেই দিন যেদিন সত্যবানের মৃত্যু হবার কথা, যমরাজ এসে সত্যবানের প্রাণ নিয়ে যেতে চাইলে সাবিত্রী তাঁকে অনুসরণ করেন এবং তাঁর বুদ্ধি, ধৈর্য ও কুশল কথনে যমরাজকে সন্তুষ্ট করেন।

অবশেষে যমরাজ তাঁকে বর দিতে রাজি হন। সাবিত্রী তার স্বামীর প্রাণ ফিরে চান এবং যমরাজ তা ফিরিয়ে দেন।


📖 ধর্মীয় রেফারেন্স (সংস্কৃত ও বাংলা অনুবাদসহ)

১. মহাভারত, বনপর্ব, অধ্যায় ২৯৫:

“সত্যবতীং মহাপ্রাজ্ঞাং সতীং সর্বগুণান্বিতাম্।
তপশ্চর্যাপরাং দেবীং পুষ্যে রাজন্ সমাচরৎ॥”

অনুবাদ: সত্যবানের পত্নী সাবিত্রী ছিলেন মহাপ্রাজ্ঞা, সতী, সমস্ত গুণে ভূষিতা, তপশ্চর্যায় নিয়োজিত এক দেবীরূপ নারী।

২. মহাভারত, বনপর্ব, অধ্যায় ২৯৮:

“না নারী তদৃশী কাচিদ্দৃষ্টপূর্বা মহীতলে।
যথৈষা পতিসন্দেহে জীবিতং প্রার্থয়তী ধ্রুবম্॥”

অনুবাদ: পৃথিবীতে সাবিত্রীর মতো কোনো নারী পূর্বে দেখা যায়নি, যে নিজের পতির প্রাণ ফিরিয়ে আনার জন্য যমরাজকে এভাবে যুক্তিপূর্ণ অনুরোধ করছে।


✨ ধর্মীয় তাৎপর্য ও নৈতিক মূল্যবোধ:

  • সাবিত্রী হলেন সতীত্ব, বুদ্ধি ও সাহসের মূর্ত প্রতীক।
  • কাহিনীটি শিক্ষা দেয় যে একজন পতিব্রতা নারী শুধু আত্মার শক্তিতেই মৃত্যুকে পরাস্ত করতে পারে।
  • সনাতন ধর্মে নারীর মর্যাদা ও ভূমিকা কী রকম গভীর তা বোঝাতে এই কাহিনী একটি চিরন্তন আদর্শ।

সাবিত্রী ও সত্যবানের ইতিহাস কি সত্য?

এই কাহিনীকে ঐতিহাসিক অর্থে প্রমাণ করা কঠিন হলেও, এটি সনাতন ধর্মের একটি শাস্ত্রসম্মত ও প্রসিদ্ধ কাহিনী। ধর্মীয় গ্রন্থসমূহে বিশেষ করে “মহাভারত”-এ এর পূর্ণাঙ্গ বিবরণ রয়েছে, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ভারতীয় সমাজে নারীর আদর্শরূপে প্রচলিত।

এটি বিশ্বাসের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত এবং হাজার হাজার বছর ধরে পালিত হচ্ছে (যেমন সাবিত্রী ব্রত)। এটি আধ্যাত্মিক ও নৈতিক শিক্ষার দিক থেকে এক বাস্তব জীবনের প্রতীক বলে গণ্য হয়।


সাবিত্রী ও সত্যবানের কাহিনী শুধুমাত্র একটি পৌরাণিক প্রেমগাঁথা নয়, এটি হল ধর্ম, সতীত্ব, প্রতিজ্ঞা ও নারীর আত্মশক্তির এক উজ্জ্বল নিদর্শন। মহাভারতের বনপর্বে এর বিশদ বর্ণনা পাওয়া যায়, যা সনাতন ধর্মের মূল পাঠ্যরূপে গ্রহণযোগ্য। এই কাহিনী যুগে যুগে মানুষকে আদর্শ জীবনযাপনের অনুপ্রেরণা দিয়ে চলেছে।


🔖 সূত্র:

  • মহাভারত (মূল সংস্কৃত টেক্সট, কৃত্তিবাস অনুবাদ ও বঙ্গানুবাদ)
  • স্বামী বিবেকানন্দ রচনাবলী (নারী ও ধর্ম বিষয়ক প্রবন্ধ)
  • গীতা প্রেস, গোরক্ষপুর থেকে প্রকাশিত “সাবিত্রী ব্রত কথা” পুস্তিকা।

ভগবান বিষ্ণুর দশ অবতার কি?


 বিষ্ণুর দশ সর্বাধিক প্রসিদ্ধ অবতার দশাবতার নামে পরিচিত। দশাবতারের তালিকাটি পাওয়া যায় গরুড় পুরাণ গ্রন্থে।

এই দশ অবতারই মানব সমাজে তাদের প্রভাবের ভিত্তিতে সর্বাপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে গণ্য হন।

দশাবতারের প্রথম চার জন অবতীর্ণ হয়েছিলেন সত্যযুগে। পরবর্তী তিন অবতারের আবির্ভাব ত্রেতাযুগে। অষ্টম অবতার দ্বাপরযুগে এবং নবম অবতার কলিযুগ অবতীর্ণ হন। পুরাণ অনুসারে, দশম অবতার এখনো অবতীর্ণ হননি। তিনি ৪২৭,০০০ বছর পর কলিযুগের শেষ পর্বে অবতীর্ণ হবেন।

গরুড় পুরাণ অনুসারে বিষ্ণুর দশ অবতার হলেন:

  1. মৎস্য, মাছের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
  2. কূর্ম, কচ্ছপের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
  3. বরাহ, শূকরের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
  4. নৃসিংহ, অর্ধনরসিংহ রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
  5. বামন, বামনের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ
  6. পরশুরাম, পরশু অর্থাৎ কুঠারধারী রামের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ
  7. রাম, অযোধ্যার রাজপুত্রের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ
  8. বলরাম, দ্বাপর যুগে অবতীর্ণ হন, কৃষ্ণের জোষ্ঠ ভ্রাতা।
  9. গৌরাঙ্গ অবতার, কলিযুগের বিষ্ণুদেবের অবতার।
  10. কল্কি, সর্বশেষ অবতার। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, কলিযুগের অন্তে তাঁর আবির্ভাব ঘটবে।            ৷     পুরো লেখার কৃতিত্ব :উইকিপিডিয়া 

সাবিত্রী আশ্রমে বড় ধরনের চুরির ঘটনা ঘটেছে

 


🙏জয় মা সাবিত্রী। 🙏

আজ ভোরে এক অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গেছে সাবিত্রী আশ্রমে। সাবিত্রী আশ্রমের পূজারী রুপন ভট্টাচার্য্য নিত্যদিনের মত ভোরে মন্দিরের কাজে গিয়ে দেখতে পান জানালা ভেঙ্গে চোর মায়ের মন্দিরে ঢুকে সিসিটিভি ক্যামেরা, মনিটর, ডিভিআর মেশিন, দান বাক্স সহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র নিয়ে গেছে এবং স্টোর রুমের মালপত্র ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় পরে আছে।



উক্ত ঘটনা জানার পর সাবিত্রী আশ্রম কমিটির সম্মানিত সভাপতি মহোদয়ের সুচিন্তিত দিকনির্দেশনা মোতাবেক পটিয়া থানাকে অবহিত করা হয়। থানা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়ে তদন্ত অফিসার পাঠিয়ে অবহিত হন ও অভিযোগ পত্র গ্রহণ করে আবারও থানার উর্দ্বতন কর্মকর্তা তার সেকেন্ড অফিসারকে নিয়ে সাবিত্রী আশ্রম সার্বিক ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন ও বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়ে সবাইকে এই বলে আশ্বস্ত করেন যে তারা বিষয়টি অতি গুরুত্বের সাথে নিয়ে তার পদক্ষেপ নিবেন। সেই মোতাবেক আজ সন্ধ্যায় থানায় আবারও পূজারি ও কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদককে থানায় ডাকা হয়েছে বিষয়টির সর্বশেষ পরিস্থিতি জানানোর জন্য। 



পটিয়া থানা কর্তৃপক্ষকে অশেষ ধন্যবাদ মন্দিরের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য।


 সাবিত্রী আশ্রম পরিচালনা কমিটিও যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে ও সকলের সহযোগিতা প্রার্থনা করছে।

এবারো সাড়ম্বরে সাবিত্রী আশ্রমে পালিত হবে শারদীয় দুর্গাপূজা


দুর্গা যাবেন বাপের বাড়ি, সঙ্গে যাবে কে ?

লক্ষী-সুরাে, গন্ শা-কেতাে, কোমর বেঁধেছে।

ময়ূর-প্যাচা, হাঁস ও ইদুর, ওরাও সাথে যাবে

পাঁচ-ছ’টা দিন, তাক-ধিনা-ধিন, মজা ক’রেই খাবে 🚩


এমন মাতৃবন্দনার হাজারো সুরে, সুরের মূর্ছনায় রাঙাতে আগামী ১লা অক্টোবর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত সাবিত্রী আশ্রম দুর্গাপূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে আয়োজন হয়েছে শারদীয়ার মাতৃবন্দনার...


উক্ত মাতৃবন্দনায় আপনি/আপনাদের সবান্ধবে উপস্থিতি কামনা করছি🙏🏿


নিবেদনে


সভাপতি 

প্রকৌশলী শ্রী শুভ দাশ (রনি)


সাধারন সম্পাদক

এডভোকেট প্রসেনজিৎ চৌধুরী (মিশু) 

এবং সাবিত্রী আশ্রম দুর্গাপূজা উদযাপন পরিষদের সকল সদস্যবৃন্দ🙏🏿🚩


#দেখা_হবে_শারদীয়ায়

Follow on us on FB Page সাবিত্রী আশ্রম

Follow n us on Group পটিয়া সাবিত্রী আশ্রম

মহালয়ার কিছু স্মৃতিরোমন্থন

মহালয়া আর  আকাশ বাণীতে শ্রী বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানে চন্ডিপাঠ এ যেনো সনাতনীর এক অমলিন এতিহ্য🚩


এক সময় পরিবারের রেডিওতে শর্ট ওয়েবে আকাশবাণী শুনতাম মহালয়ার দিন ভোরে।✔️ অনেক সমস্যা আর সাউণ্ড সিস্টেম এর প্রচন্ড  উৎকটেও বিন্দুমাত্র টলানো যেতো কাউকে মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানে  শ্রী বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চন্ডিপাঠ শোনা থেকে..✊


আজ যুগ পাল্টে গেছে ঠিকই, শর্ট ওয়েবে চন্ডিপাঠ শোনা এখনকার সময়ে অনেকটা অসম্ভব হলেও নতুন যুগের AIR. এর APP টা যখন আজকে বাংলাদেশ সময় ৫.৩০ এ  অন করে বাংলা সম্প্রচার সিলেক্ট  করলাম তখন চিরাচরিত নিয়মে ভেসে এলো শ্রী বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সেই ভারি কন্ঠে চন্ডিপাঠ🙏🏿 


সত্যি অসাধারণ অভিজ্ঞতা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সেবাতে নতুন প্রযুক্তি যুক্ত করলেও আকাশবানী ভোলেনি তার সেই বাঙালির চিরায়িত প্রকৃতিকে❤️


ভালো থেকে প্রিয় All India Radio - Akashvani 


এবং প্রিয় শ্রী বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র

সাবিত্রী আশ্রমে দুর্গাপূজার প্রস্তুতিসভা অনুষ্ঠিত

প্রতিকি ছবি

প্রিয় সনাতনী,  অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে গত ২২ জুলাই রোজ শুক্রবার সাবিত্রী আশ্রম প্রাঙ্গনে আসন্ন দুর্গাপূজা ২০২২ এর প্রস্তুতিসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এই সভাতে আসন্ন দুর্গাপূজার সকল বিষয়ে আলোচনা, সিন্ধান্ত ও পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। 

এখানে উল্লেখ্য বিষয় যে, উক্ত সভাতে যারা উপস্থিত হতে পারেন নি তারাও বরাবরের মতোই আমাদের পরিকল্পনার সহযোগী অংশ হিসেবে যথাসম্মানে বিবেচিত হবেন এবং তাদের পরামর্শ ও সহযোগিতা আমাদের একান্ত কাম্য।


আর উপস্থিত সকলের পক্ষ থেকে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা ২০২২ এর  মহত্তোর আয়োজনে আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করে উদার্ত আহ্বান জানানো হয়েছে।


উপস্থিত সকলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই বছরও পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন  প্রকৌশলী শ্রী শুভ দাশ (রনি) ও 

সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন এডভোকেট শ্রী প্রসেনজিৎ চৌধুরী (মিশু)


 বি:দ্র: সাবিত্রী আশ্রম দুর্গাপূজা উদযাপন পরিষদ ২০২২ এর পূর্নাঙ্গ কমিটির সদস্যদের নাম ও পদবী শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে।


ফেসবুক পেজ লিংক www.Facebook.com/sabitriashrom

ফেসবুক গ্রুপ লিংক fb://group/430823723700885?ref=share

#দেখা_হবে_শারদীয়ায়_২০২২

সাবিত্রী আশ্রমে প্রতিবছরের ন্যায় এবারো পালিত হবে উত্তরায়ণ সংক্রান্তি

 

প্রতিকী ছবি


সংক্রান্তি শব্দটি কে ভাঙলে দাঁড়ায় সং + ক্রান্তি।  অর্থাৎ বিভিন্ন রূপে সাজে গমন৷  সংক্রান্তি শব্দের অর্থ অন্যত্র গমন বা ভিন্নরূপে অন্যত্র গমন।  আগামী ১৪ ই জানুয়ারি শেষ হচ্ছে বাংলার পৌষ মাস।  ১৪ তারিখ পৌষ সংক্রান্তি।  এরপরে মাঘ মাসের শুরু।  এই বিশেষ মুহূর্তে সূর্য ধনু রাশি ত্যাগ করে প্রবেশ করেন মকর রাশিতে।  শুরু হয় সূর্যের উত্তরায়ন।  সূর্যের আলোকে প্রাণ ফিরে পায় রুক্ষ কঠিন ধরা৷  তাই পৌষ মাসের শেষ দিন পালিত হয় পৌষ সংক্রান্তি বা  মকর সংক্রান্তি।

এ উপলক্ষে সাবিত্রী আশ্রমে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সাথে পালিত হবে উত্তরায়ণ সংক্রান্তির বিশেষ আচার অনুষ্ঠান।  মায়ের উদ্দেশ্য ভোগ নিবেদন ও আগত সকল ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হবে মায়ের প্রসাদ।

এ বিশেষ শুভক্ষণে সকলকে সাবিত্রী আশ্রমে এসে মায়ের প্রসাদ গ্রহনের বিশেষ আমত্রণ রইল।


এবার জেনে নেয়া যাক উত্তররায়ন সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি সম্পর্কে সনাতনধর্ম কি বলে..

মকর সংক্রান্তির পৌরাণিক ব্যাখ্যাও রয়েছে।  সূর্য এই লগ্নে তার ছেলে মকর অধিপতি শনি যাত্রা শুরু করেছিলেন। তাই এই দিনটিকে বাবা-ছেলের সম্পর্কের মিলনের দিন হিসেবেও পালন করা হয়।  আবার মহাভারতে ভীষ্মের শরশয্যা সঙ্গে মকর সংক্রান্তির সম্পর্ক রয়েছে।  কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ভীষ্ম শরশয্যা শুয়েছিলেন৷ পিতা শান্তনু থেকে পাওয়া স্বেচ্ছামৃত্যুর বর পেয়েছিলেন।  কিন্তু তাও মৃত্যুর অধিক যন্ত্রণা সহ্য করেছিলেন কারণ সেই সময় ছিল সূর্যের দক্ষিণায়ন।

দক্ষিণায়ন কে তুলনা করা হয় রাতের সঙ্গে।  রাতের বেলা সবাই যেমন বিশ্রাম করে তেমনি স্বর্গের দেবতারা টানা ছয় মাস বিশ্রাম নেন৷ ওই সময় যদি ভীষ্ম স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করতেন তাহলে তাকে স্বর্গের দরজায় দাঁড়িয়ে দেবতাদের ঘুম ভাঙার জন্য অপেক্ষা করতে হত।

কথিত রয়েছে সূর্যের দক্ষিণায়ন এর সময়  প্রাণত্যাগ করলে পুনর্জন্ম হয়৷ আর উত্তরায়নের মৃত্যু মানে পৃথিবী থেকে চির মুক্তি।  তাই ভীষ্ম অপেক্ষা করেছিলেন সূর্যের উত্তরায়ন এর জন্য।  অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।  মকর সংক্রান্তির পূন্য লগ্নে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।  অন্যদিকে সূর্যের উত্তরায়ন শুরু হল খুলে গেল স্বর্গের দ্বার।  ঘুম ভাঙলো দেবতাদের। তাই কর্কট সংক্রান্তি অপেক্ষা মকর সংক্রান্তি অধিক গুরুত্বপূর্ণ।


তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট 

রাধাঅষ্টমীর উপবাস কি আধা? নাকি দিনান্ত?


 রাধাষ্টমী ব্রত পালনের ক্ষেত্রে অর্ধবেলা উপবাস কেবল মাত্র অসমর্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই শাস্ত্রীয় বিধি--

----------------------------------------------------------------------


আজ আমার প্রেমময়ী শ্রীমতি রাধা রাধারানীর আবির্ভাব তিথি। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে এই তিথিটি পালন করে থাকেন। পদ্মপুরাণে রাধাষ্টমী ব্রত মাহাত্ম প্রসঙ্গে দেবর্ষি শ্রীনারদের প্রতি পরম বৈষ্ণব মহাদেব বলেছিলেন- 


হে দেবর্ষি!


 ব্রহ্মা প্রমুখ মহান সত্তমগনের নিত্য মহারাধ্যা যিনি, দেবতাগন দূর থেকে যার সেবা করতে ইচ্ছা করেন,

সেই শ্রীশ্রী রাধিকাদেবীকে সতত ভজনা করা উচিত।


 এই রাধানাম যে ব্যাক্তি শ্রীকৃষ্ণনামের সঙ্গে কীর্তন করেন, তার মাহাত্ম্ আমি কীর্তন করতে সক্ষম নই, এমনকি শ্রী অনন্তদেবও নন।


প্রপঞ্চ লীলায় পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অন্তরঙ্গা স্বরূপশক্তি গোলোকেশ্বরী রাধারাণী ভাদ্র মাসে শুক্লা অষ্টমী তিথিতে অনুরাধা নক্ষত্রে সোমবারে মধ্যাহ্ন কালে ব্রজমণ্ডলে শ্রীগোকুলের অনতিদূরে রাভেল নামক গ্রামে শ্রীবৃষভানু রাজা ও কীর্তিদা মায়ের ভবনে সকলের হৃদয়ে আনন্দ দান করে আবির্ভুত হন।


শ্রীমতি রাধারাণীর করুণার তত্ত্ব, এবং রাধাষ্টমী তিথির সম্যক মাহাত্ম প্রাননাথ স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ব্যতিত আরো কারো পক্ষে বর্ণনা করা সম্ভব নয়।


শ্রী পদ্মপুরাণে (ব্রহ্মখণ্ড ৭/৮) বলা হয়েছে-


একাদশ্যাঃ সহস্রেন যং ফলং লভতে নরঃ।

রাধা জন্মাষ্টমী পুণ্যং তস্মাং শত গুণাধিকম্।।


"একহাজার একাদশী ব্রত পালন করলে যে ফল লাভ হয়, শ্রীরাধাষ্টমী ব্রত পালন করলে তার চেয়ে

শতগুন অধিক ফল লাভ হয়ে থাকে।"


আরও বলা হয়েছে,


*কোটি জন্মের অর্জিত পাপরাশি ভক্তিপূর্ণ রাধাষ্টমী ব্রত ফলে বিনষ্ট হয়।


*সুমেরু পর্বত সমান সোনা দান করলে যে ফল লাভ হয় একটি মাত্র রাধাষ্টমী ব্রত উদযাপন করে তার শতগুন অধিক ফল লাভ হয়।


*গঙ্গা ইত্যাদি সমস্ত পবিত্র তীর্থে স্নান করে যে ফল লাভ হয়, একমাত্র বৃষভানুকন্যার জন্মাষ্টমী পালন করে সেই ফল লাভ হয়।


 পদ্মপুরাণে আরো বলা হয়েছে-


রাধাষ্টমী ব্রতং তাত যো ন কুর্য্যাচ্চ মূঢ়ধী।

নরকান্ নিষ্কৃতি নাস্তি কোটিকল্পশতৈরপি।।


"যে মূঢ় মানব রাধাষ্টমী ব্রত করে না, সে

শতকোটি কল্পেও নরক থেকে নিস্তার পেতে পারেনা।"


 স্ত্রীয়শ্চ যা না কৃবন্তি ব্রতমেতদ্ সুভপ্রদম। রাধাকৃষ্ণপ্রীতিকরং সর্বপাপপ্রনাশম্।।

অন্তে যমপুরীং গত্বা পতন্তি নরকে চিরম্।

কদাচিদ্ জন্মচাসাদা পৃথিব্যাং বিধবা ধ্রুবম্।।


"যে নারী শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের প্রীতিকর সর্ব পাপনাশক এই শুভপ্রদ মহাব্রত পালণ করে না, সে জীবনের অন্তকালে নরকে গিয়ে চিরকাল সেখানে যাতনা ভোগ করে। পৃথিবীতে থাকাকালীনও সে দুর্ভাগিনী হয়।"


*এই মহাব্রত করলে শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণের অভয় পাদপদ্মে অচলা ও অব্যভিচারিনী ভক্তি লাভ হয়ে থাকে।


এবার মূল প্রসঙ্গে আসা যাক,


রাধাষ্টমী ব্রতের উপবাস কতক্ষণ করতে হবে এই বিষয়টি জানার জন্য প্রবন্ধটি লিখার পূর্বে শতাধিকের উপরে কল রিসিভ করেছি। সবাইকে জ্ঞাত করার মনোরথে আজকের এই দিব্য সন্দেশ!


শ্রীশ্রী রাধাষ্টমীসহ অন্যান্য বৈষ্ণব ব্রত পালন করার বিষয়ে সম্পূর্ণ দিন ব্রত পালন করা কিংবা অভিষেক করার পর তিথি অন্তে পারণ করার বিধান দুটিই শাস্ত্র সম্মত। 


গড়ুর পুরাণ এই প্রসঙ্গে বলেছেন-


তিথ্যন্তে চোৎসবান্তে বা ব্রতীকুর্ব্বীতত পারণ!


অর্থাৎ ব্রতী তিথি অন্তে কিংবা উৎসব অন্তে পারণ করতে পারেন।


বায়ুপুরাণেও উক্ত সিদ্ধান্তটি স্বীকৃত।


শ্রীমতি রাধারানীর আবির্ভাব দুপুরবেলা। তাই অনেক ভক্তই দুপুরে অভিষেক করে অন্ন প্রসাদ পেয়ে নেন। তবে এই বিধান কার জন্য আমরা এই বিষয়ে এখন আলোকপাত করবো----


***বৈষ্ণব চূড়ামণি সনাতন গোস্বামীপাদ কেবল মাত্র অসমর্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে তিথি কিংবা অভিষেক অন্তে পারণকে অনুমোদন করেছেন**


অসমর্থ ব্যক্তি বলতে সনাতন গোস্বামীপাদ বুঝিয়েছেন- যাদের বয়স অনেক হয়ে গিয়েছে, যারা রোগে শোকে আক্রান্ত, তারাই কেবল তিথি অন্তে অনুকল্প গ্রহণ করতে পারবেন।


বর্তমানে অনেকেই সমর্থ হওয়ার পরও অসমর্থের দোহাই দিয়ে দুপুর ১২ টার পরই পেট ভরে অন্ন খেয়ে নেন। আবার অনেকেই নিজেরা অসমর্থের দলে আছেন বলে অন্যদের নিকটও দুপুর ১২ টা পর্যন্ত উপবাস বলে প্রচার করছেন, যা সত্যিই দুঃখজনক। এমনকি মহাপ্রভু এবং ষড়গোস্বামীপাদের আইনের বিরুদ্ধ আচরণ।


আমার শরীরে যৌবন শক্তি রয়েছে, আমি সবল এবং কর্মকক্ষম, এমন থাকার পরও আমি কি অসমর্থের দলে? আমি দুপুর ১২ টার পর পেট ভরে খাব, এবং অন্যকেও অসমর্থের দলে আনতে প্রচার করবো?


স্বয়ং বিচার করুন-------!


একটা দিন কৃষ্ণ প্রেম তরঙ্গিনী শ্রীমতি রাধারানীর জন্য না খেয়ে তাঁর গুণ মহিমা কীর্ত্তন করতে পারিনা? যে রাধা রানীর প্রেমে জগত বশীভূত, এমনি স্বয়ং ভগবান গোবিন্দ পর্যন্ত বশীভূত-


মুই পীতবাস রাধারানীর দাস, তিলেক সংশয় যার।

কোটি জন্ম যদি ভজয়ে আমারে, বিফল জনম তার।।


আহারে! কি করুণ আর্তনাদ ভগবানের! এই প্রাণমাতানো অভিব্যক্তির পরও রাধাষ্টমী ব্রত পালনে এই অবহেলাপূর্ণ আচরণ বৈষ্ণব ভক্তদের সত্যি কষ্ট দেয়।


তাছাড়া ভবিষ্যপুরাণে সূত-শৌনক সংবাদে রাধাষ্টমীব্রত কথা প্রকরণে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নারদ সংবাদে বলা হয়েছে-


ভাদ্রে মাসি সিতে পক্কে অষ্টমী যা তিথির্ভবেৎ।

তস্যাং অনুরাধা নক্ষত্রে দিনার্দ্ধেহভিজিতেক্ষণে।।

অতীব সুকুমারাঙ্গীং কীর্ত্তিদা অসুত কন্যকম্।।

এবং সদনুসন্ধানৈস্তাং তিথিং সমুপোষয়েৎ।

পরেহহ্নি পারণং কুর্য্যাৎ বৈষ্ণবেঃ সহ বৈষ্ণবঃ।।


ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দেবর্ষি নারদকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন-


ভাদ্রমাসে, শুক্লাপক্ষ অষ্টমী তিথি, অনুরাধা নক্ষত্র, মধ্যাহ্নে, অভিজিৎযোগে, শুভ ক্ষণে কীর্ত্তিদা সুন্দরীর কোল আলো করে রাধারানী আবির্ভূত হন। সাধুগণ তাদের পারমার্থিক মঙ্গলের জন্য সেই তিথিতে উপবাস করবেন এবং পরদিন বৈষ্ণবগণের সঙ্গে বৈষ্ণবগণ পারণ করবেন।


ভগবান স্বয়ং নারদকে উদ্দেশ্য করে এই উপবাস এবং নির্দিষ্ট সময়ে পারণের বিধান দিয়েছেন। এখন কেউ যদি অপারগতার দোয়াই দিয়ে দুপুরে রাধারানীর অভিষেক করে অন্ন প্রসাদ গ্রহণ করে নেন, এটা তার ব্যক্তিগত অভিরুচি।


তবে অবশ্যই তিনি যে অসমর্থের দলে শাস্ত্রীয় বিচারে তার কোন সন্দেহ নেই।


সুতরাং সহৃদয়বান পাঠক বৃন্দ, 


এবার আপনারাই শাস্ত্রের আঙ্গিকে বিচার করে সিদ্ধান গ্রহণ করুন- দুপুর ১২ টা পর উপবাস ভঙ্গ করে পারণ করবেন, না পরের দিন নির্ধারিত সময়ে উপবাস ভঙ্গ করে পারণ করবেন???


লিখেছেন শ্রী প্রদীপ রুদ্র

সাবিত্রী-সত্যবান এবং সনাতন

  সাবিত্রী ও সত্যবান: একটি ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ সাবিত্রী ও সত্যবানের কাহিনী সনাতন ধর্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এক নারী-আদর্শ ও প...