অক্ষয় তৃতীয়া কি এবং কেনো
শুভ অক্ষয় তৃতীয়া দিনটি সনাতন ধর্মের জন্য খুবই অর্থবহ গুরত্বপূর্ণ।
এই দিনে যে একটি পূণ্য কাজ করা হয় তা ৬০ হাজার বছর পর্যন্ত অক্ষয় হয়ে থাকে, আবার একটি পাপ কাজ করলে ও তা ৬০ হাজার বছর পর্যন্ত অক্ষয় থেকে যাবে।।
অক্ষয় তৃতীয়া হল চান্দ্র বৈশাখ মাসের শুক্লা তৃতীয়া শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথি। হিন্দু ও জৈন ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এই তিথি। অক্ষয় শব্দের অর্থ হল যা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। বৈদিক বিশ্বাসানুসারে এই পবিত্র তিথিতে কোন শুভকার্য সম্পন্ন হলে তা অনন্তকাল অক্ষয় হয়ে থাকে। এই শুভদিনে জন্ম নিয়েছিলেন বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম। বেদব্যাস ও গনেশ এই দিনে মহাভারত রচনা আরম্ভ করেন। মূলত এপ্রিলের শেষে ও মে মসের প্রথমে এই শুভ তিথি পালন করা হয়।
অক্ষয়তৃতীয়ার গুরূত্ব বিশাল। এদিন অনেকগুলি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল।
১) এদিনই রাজা ভগীরথ গঙ্গা দেবীকে মর্ত্যে নিয়ে এসেছিলেন।
২) এদিনই গণপতি গনেশ বেদব্যাসের মুখনিঃসৃত বাণী শুনে মহাভারত রচনা শুরু করেন।
৩) এদিনই দেবী অন্নপূর্ণার আবির্ভাব ঘটে।
৪) এদিনই সত্যযুগ শেষ হয়ে ত্রেতাযুগের সূচনা হয়।
৫) এদিনই কুবেরের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাঁকে অতুল ঐশ্বর্য প্রদান করেন। এদিনই কুবেরের লক্ষ্মী লাভ হয়েছিল বলে এদিন বৈভব-লক্ষ্মীর পূজা করা হয়।
৬) এদিনই বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম জন্ম নেন পৃথিবীতে।
৭)এদিনই ভক্তরাজ সুদামা শ্রী কৃষ্ণের সাথে দ্বারকায় গিয়ে দেখা করেন এবং তাঁর থেকে সামান্য চালভাজা নিয়ে শ্রী কৃষ্ণ তাঁর সকল দুখ্হ মোচন করেন।
৮)এদিনই দুঃশাসন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করতে যান এবং সখী কৃষ্ণাকে রক্ষা করেন শ্রীকৃষ্ণ। শরনাগতের পরিত্রাতা রূপে এদিন শ্রী কৃষ্ণা দ্রৌপদীকে রক্ষা করেন।
৯) এদিন থেকেই পুরীধামে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উপলক্ষ্যে রথ নির্মাণ শুরু হয়।
১০) কেদার বদরী গঙ্গোত্রী যমুনত্রীর যে মন্দির ছয়মাস বন্ধ থাকে এইদিনেই তার দ্বার উদঘাটন হয়। দ্বার খুললেই দেখা যায় সেই অক্ষয়দীপ যা ছয়মাস আগে জ্বালিয়ে আসা হয়েছিল।
১১)এদিনই সত্যযুগের শেষ হয়ে প্রতি কল্পে ত্রেতা যুগ শুরু হয়।
১২) তন্ত্রের মতে বরা হচ্ছে দক্ষযজ্ঞে পতিনিন্দা শ্রবণে সতী দেহত্যাগ করেছিলেন নিজের দেহ থেকে কোপাগ্নি সৃষ্টি করে। সেই অগ্নিময় দেহ ধূমে পরিব্যাপ্ত হয়েছিল। সেই তিথিটি ছিল অক্ষয় তৃতীয়া-মঙ্গলবার সন্ধ্যাবেলায়। তাই তন্ত্রে বলে দেবী ধূমাবতীর সৃষ্টি- “প্রাপ্তে অক্ষয় তৃতীয়ায়াং জাতা ধূমাবতীশিবে। কালী-কালী কালবক্ত্রা ভৌমবারে নিশামুখে।”
এহেন অক্ষয় তৃতীয়াতে যেকোন শুভকাজ শুরু করা ভালো। এদিনের তিথির বিশেষত্ব হচ্ছে - এদিন যে কাজ করা হোক না কেন তার ফল হয়ে দাঁড়ায় অক্ষয়।
সূত্র: ফেসবুক
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
সাবিত্রী-সত্যবান এবং সনাতন
সাবিত্রী ও সত্যবান: একটি ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ সাবিত্রী ও সত্যবানের কাহিনী সনাতন ধর্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এক নারী-আদর্শ ও প...

-
গীতা পাঠ শুরুর প্রারম্ভে মনের পবিত্রতার সহিত পবিত্র বস্ত্র পরিধান করে শ্রীগীতা পাঠের জন্য পবিত্র স্থান বা আসন পেতে উত্তর বা পূর্ব-মুখ করিয...
-
ভৈরব মন্দির ভৈরব প্রতিমা বর্ননাঃ শিবের অংশ অস্ত্র :ত্রিশুল সঙ্গী : ভৈরবী বাহন :কুকুর ভৈরব’ সংস্কৃত শব্দ, এর অর্থ ‘ভয়ঙ্ক...
-
আজ কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় মন্ত্র দেয়া হল ১। সকল কাজের আগে এবং কোন কিছু শুরু করার পূর্বে বলুন - ওম বিষ্ণু স্মরনম / হরে কৃষ্ণ - অর্থাৎ হে প...
No comments:
Post a Comment